বরিশালের নতুন মা হিসেবে গত কয়েক মাসে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সত্যিই নতুনভাবে বুঝতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ সন্তান জন্মের আনন্দ তো আছেই, কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ক্লান্তি, ঘুম কমে যাওয়া আর নিজের সময় না পাওয়া মিলিয়ে মানসিক চাপও বেড়ে যায়। বিশেষ করে রাতের দিকে বাচ্চা কান্না করলে বা ঠিকভাবে ঘুম না হলে অনেক সময় মনটা দমে যায়। আগে এসব নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে সংকোচ লাগত, কিন্তু এখন বুঝি যে আমাদের এই অনুভূতিগুলো খুবই স্বাভাবিক।
অনেক মা ভাবেন তারা একাই কষ্ট পাচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে এখনকার দিনে প্রায় সব মা-ই এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান। আমার নিজের ক্ষেত্রে পরিবার কাছাকাছি থাকায় কিছুটা সুবিধা হয়েছে। তবুও কখনও কখনও মনে হয় নিজের অনুভূতি নিয়ে কথা বলার জন্য আরেকজন মায়ের প্রয়োজন হয়। তাই বরিশালের কয়েকজন নতুন মায়ের সঙ্গে ছোট একটা গ্রুপ তৈরি করেছি। সেখানে আমরা Facebook Messenger দিয়ে কথা বলি, কে কেমন আছে, কার দিন কেমন গেল এসব শেয়ার করি। ইনশাআল্লাহ সবাই যখন নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে তখন মনে হয় ভারটা একটু হালকা হয়।
চাপ কমাতে আমি কয়েকটা সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করছি। প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিট নিজের জন্য সময় বের করি। কখনও শুধু চা খাই, কখনও নরম গান শুনি। বাচ্চা ঘুমালে ছোট ছোট নোট লিখে রাখি, কোন জিনিস আমাকে বেশি স্ট্রেস দিচ্ছে আর কোন জিনিস ভালো লাগাচ্ছে। এতে নিজের আবেগগুলোকে ভালোভাবে বুঝতে সুবিধা হয়। পাশাপাশি স্বামীর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলার চেষ্টা করি। অনেক সময় শুধু বলেই দিলে মনে শান্তি আসে।
বরিশালের আবহাওয়া এখন বেশ আরামদায়ক, তাই মাঝে মাঝে বিকেলে বাচ্চাকে নিয়ে ছাদে একটু হাঁটাহাঁটি করি। এতে মন বেশ ফুরফুরে লাগে। ডাক্তাররা বলেন নিয়মিত হালকা হাঁটা মানসিক স্বাস্থ্যে ভালো প্রভাব ফেলে। নিজের সুস্থতা না থাকলে সন্তানকে পুরো মনোযোগ দিতে কঠিন, তাই নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া কোন স্বার্থপরতা নয়। বরং এটা দরকারি যত্ন।
সবশেষে শুধু একটা কথাই বলতে চাই, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা লজ্জার কিছু নয়। আমরা যারা নতুন মা, সবাই একই রকম অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাই। তাই একে অপরকে সমর্থন করা খুব জরুরি। আল্লাহ সবাইকে শান্তি, ধৈর্য আর সুস্থতা দিন। মাশাআল্লাহ আমাদের ছোট্টদের সঙ্গে এই নতুন জীবনটা আরও সুন্দর হোক।
Top comments (0)