১২ জুন ২০২৫, বরিশাল শহরের গরম বিকেলে বসে লিখছি আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা। ভাইরা, অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম এই গল্পটা শেয়ার করব কি না। কিন্তু মনে হল, হয়তো কারও উপকারে লাগতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ এখন পরিস্থিতি কিছুটা ভালো, তবে কয়েক বছর আগের কথা মনে করলে এখনও মনটা ভারী হয়ে যায়। আমার আর তাহমিনার সম্পর্ক শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়, একেবারে শান্ত, সরল মেয়ে। মাশাআল্লাহ খুব ভালোভাবেই সবকিছু এগোচ্ছিল, কিন্তু বাড়িতে বিষয়টা বলার পর থেকেই সত্যিকারের পরীক্ষা শুরু হলো।
আমার পরিবার প্রথম থেকেই চায়নি আমি নিজের পছন্দে বিয়ে করি। বিশেষ করে আম্মু ভয় পেতেন সমাজ কী বলবে, আর গ্রামে থাকা চাচারা নানা রকম কথা বলতেন। আমার বাবা একটু নরম ছিলেন, কিন্তু তিনি কথাটা স্পষ্ট বলেছিলেন যে বিয়ে মানেই দুই পরিবারের মিল। এই বিষয়টাই তখন সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াল। একদিকে তাহমিনার পরিবার খুবই ইতিবাচক ছিল, আরেকদিকে আমার পরিবার সন্দেহ আর ভয়ের মধ্যে আটকা পড়ে ছিল। প্রতিদিন ঘরে ঝগড়া, মন খারাপ, এমনকি কিছুদিন তো কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তাহমিনাকে নিয়ে অনেকবার ভাবতাম, কি করব, কিভাবে পরিবারকে রাজি করাব। ওকে কষ্ট দিতে চাইতাম না, আবার পরিবার থেকেও দূরে যেতে পারছিলাম না। এই সময়টাতে আমরা দুইজনই বেশ চাপের মধ্যে ছিলাম। ও বলত, ইনশাআল্লাহ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু তখন আমার নিজেরই সেই বিশ্বাসটা নাড়িয়ে যাচ্ছিল। পড়াশোনা, চাকরি, নিজের ভবিষ্যৎ সবই যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। বরিশালের নিজের বাড়িতে থাকলেও মনে হত নিজের ঘরটাই যেন আর আগের মত নেই।
প্রায় এক বছর ধরে ধৈর্য নিয়ে চলার পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করল। আম্মু প্রথমে রাজি না হলেও আমার অবস্থা দেখে নরম হতে শুরু করলেন। বাবা নিজে থেকেই একদিন বললেন যে সিদ্ধান্তটা আমারই হওয়া উচিত। সেই মুহূর্তটা সত্যি মনে আছে ভাই, মনে হয়েছিল বুকের ওপরের পাথরটা নেমে গেল। এরপর দুই পরিবার দেখা করল, কথা বলল। প্রথমে একটু অস্বস্তি থাকলেও ধীরে ধীরে সবার মন নরম হলো। আলহামদুলিল্লাহ এখন দুই পরিবারই বেশ ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছে।
এখন পিছনে তাকালে বুঝি, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা মানে শুধু প্রেম নয়, ধৈর্য, শ্রদ্ধা আর পরিবারের সাথে সঠিকভাবে কথা বলা খুব জরুরি। তাই যদি কেউ এমন সমস্যার মধ্যে থাকে, ভাইদের বলব, হতাশ হবেন না। কখনও কখনও সময়ই হলো সবচেয়ে বড় সমাধান। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে, শুধু সঠিক পথে থাকা আর মন পরিষ্কার রাখা দরকার।
Top comments (0)