Banglanet

বাংলাদেশে ই-কমার্স শুরু করার বাস্তব গাইড

বাংলাদেশে ই-কমার্স এখন আর নতুন কিছু নয়, তবে আজকাল ক্রমাগত বদলানো বাজার, গ্রাহকের আচরণ এবং প্রযুক্তির কারণে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরিষ্কার একটি রোডম্যাপ থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজে খুলনা সিটির মানুষ, আর মধ্যপ্রাচ্যে থাকলেও আলহামদুলিল্লাহ অনেকদিন ধরে পরিবারকে সাহায্য করে অনলাইনে ছোটখাট ব্যবসা পরিচালনা করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বিশ্লেষণমূলক পরামর্শ শেয়ার করছি, যেন নতুনরা বাস্তব অবস্থাটা বুঝে শুরু করতে পারে।

প্রথমত, একটি ই-কমার্স ব্যবসার মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাসযোগ্যতা। বাংলাদেশে আগে কিছু খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে গ্রাহকরা এখন অনেক সচেতন। তাই শুরুতেই পরিষ্কার নীতি, সঠিক পণ্যের ছবি, রিটার্ন নীতি এবং দ্রুত গ্রাহকসেবা রাখা জরুরি। গ্রাহক প্রশ্ন করলে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেওয়া, bKash বা নগদের মাধ্যমে নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করা, এবং ডেলিভারিতে অতিরিক্ত সময় নিতে হলে আগেই জানিয়ে দেওয়া বিশ্বাস তৈরি করতে সাহায্য করে। আমি যখন প্রথম শুরু করি, তখন দেখেছি ছোট ভুলও গ্রাহকের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।

দ্বিতীয়ত, আজকাল বিপণনের বড় অংশটাই Facebook পেজ, Instagram এবং YouTube রিভিউর উপর নির্ভর করে। বিশেষ করে বাংলাদেশে লাইভ সেলিং খুব জনপ্রিয় হয়েছে। তাই শুরুতেই প্রযুক্তিগতভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি। ভাল ক্যামেরা, পরিষ্কার আলো এবং সহজ ভাষায় পণ্যের ব্যাখ্যা গ্রাহকের আগ্রহ বাড়ায়। পাশাপাশি ছোট বাজেটেও Boosting করে সঠিক অডিয়েন্স টার্গেটিং করা যায়। তবে বাজেট নষ্ট না করতে আগে দুই সপ্তাহ ধরে কোন ধরনের গ্রাহক আপনার পণ্যে আগ্রহ দেখাচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করা ভালো।

তৃতীয়ত, লজিস্টিক বা ডেলিভারি ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকা, চট্টগ্রাম বা খুলনার মধ্যে ডেলিভারি ব্যবস্থা এখন অনেক সহজ হলেও দেশের দূরবর্তী জেলাগুলোতে সময় বেশি লাগে। তাই Pathao, Steadfast বা অন্য কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করার সময় তাদের কভারেজ, মূল্য এবং পরিষেবার মান যাচাই করা দরকার। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, একই পণ্য বিভিন্ন সার্ভিসে পাঠিয়ে তুলনা করলে কোনটা আপনার ব্যবসার জন্য ভাল হবে তা দ্রুত বুঝে নেওয়া যায়।

শেষ দিকে একটা কথা বলতে হয়, ই-কমার্সে টিকে থাকতে হলে ধৈর্য সবচেয়ে বড় বিষয়। শুরুতেই বড় লাভ আশা করলে হতাশা আসতে পারে। নিয়মিত গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রতিদিন অল্প করেও কনটেন্ট আপলোড, এবং বাজারের পরিবর্তন অনুযায়ী পণ্যের লাইন আপডেট করতে পারলে ইনশাআল্লাহ স্থায়ী গ্রাহক তৈরি হয়। যারা শূন্য থেকে শুরু করছেন, তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে ছোট পরিসরে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় করা। এতে ঝুঁকি কমবে এবং অভিজ্ঞতা বাড়বে।

এই কয়েকটি দিক মাথায় রাখলে বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করা তুলনামূলক সহজ এবং টেকসই হয় বলে মনে করি। মাশাআল্লাহ এখন সুযোগ অনেক, শুধু সঠিক পরিকল্পনা আর নিয়মিত পরিশ্রম দরকার।

Top comments (0)